আজকের হেলথ টিপস- মেরুদণ্ড, দেহের খুঁটি


ই-বার্তা প্রকাশিত: ৮ই নভেম্বর ২০১৭, বুধবার  | সন্ধ্যা ০৬:২০ মেডিকেল

কঙ্কাল মানবদেহের কাঠামো হিসেবে কাজ করে। আর দেহের এই কাঠামোকে দৃঢ়তা দেয় মেরুদণ্ড। মেরুদণ্ডকে ইংরেজিতে বলে ভার্টিব্রাল কলাম। একে ব্যাকবোনও বলে। সুষ্ঠুভাবে চলাচল, দৌড়ানো ও ব্যায়ামের জন্য ব্যাকবোন যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। আবার অনেকেই মেরুদন্ডকে বলেন শিরদাড়া।

ব্যাকবোন ৩৩টি ওল্টানো চতুষ্কোণাকৃতি হাড়ের সমন্বয়ে গঠিত। হাড়গুলোর নাম কশেরুকা। একে ইংরেজিতে বলে ভার্টিব্রা। গোলাকার একটা চাকতির সঙ্গে ছোট তিনটি তলোয়ারের মতো কশেরুকার গঠন। প্রতিটি কশেরুকায় চাকতি ও তলোয়ারের সংযুক্তির মধ্যে গোলাকার ফাঁকা স্থান থাকে। এই ফাঁকা স্থানকে বলে ইন্টার ভার্টিব্রাল ফোরামেন। এই ফোরামেন বা ছিদ্র দিয়ে স্পাইনাল কর্ড নামক স্নায়ু চলাচল করে এবং সারা দেহে স্নায়ুর শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে যায়। পরপর দুটি কশেরুকার মধ্যে আয়রন ও ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ পাতলা হাড়ের একটা স্তর থাকে। স্তরটা কশেরুকার দুটি চাকতির মধ্যে অবস্থিত। স্তরটির নাম ইন্টার ভার্টিব্রাল ডিস্ক।

দেহে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমে গেলে ইন্টার ভার্টিব্রাল ডিস্ক ক্ষয় হতে থাকে। ক্যালসিয়ামের অতিরিক্ত অভাবে ইন্টার ভার্টিব্রাল ডিস্ক সম্পূর্ণ ক্ষয় হয়ে দুটি কশেরুকা একসঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। তখন সম্পূর্ণ মেরুদণ্ডে অসাম্যাবস্থা চলে আসে। আবার অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম ও আয়রনের জন্য মেরুদণ্ডের কশেরুকা গঠনগতভাবে বৃদ্ধি পায়। অনেক সময় কোন নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াও মেরুদন্ডের হাড় বড় হতে পারে। শুধু মেরুদন্ড নয়, যেকোন হাড় বড় হতে পারে। তখন তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়।

৩৩টি কশেরুকা ঘাড়ের ওপরের প্রান্ত থেকে কোমরের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত। এদের সারভাইক্যাল, থোরাসিক, লাম্বার, স্যাকরাল, কক্সিজিয়াল ভার্টিব্রা বলে। সারভাইক্যাল ভার্টিব্রা সংখ্যায় সাতটি এবং ঘাড়ের ওপর থেকে গলার নিচ পর্যন্ত বিস্তৃত। থোরাসিক ১২টি, এদের সীমানা পুরো কক্ষপিঞ্জর। লাম্বার পাঁচটি এবং বিস্তৃতি কোমরে। স্যাকরাল কোমরের শেষের দিকে অবস্থিত এবং সংখ্যায় পাঁচটি। আর সবশেষে কক্সিজিয়াল, এখানে রয়েছে চারটি ভার্টিব্রা। এই ৩৩টি ভার্টিব্রার সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে অজস্র হাড়ের জয়েন্ট। এই জয়েন্টগুলোর জন্যই মেরুদণ্ডে থাকে স্থিতিস্থাপকতা। ফলে মানুষ হাঁটতে, দৌড়াতে ও ব্যায়াম করতে পারে। হাড়ের সমস্ত জয়েন্টের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে এই মেরুদণ্ড। এ জন্য একে বলা হয় দেহের খুঁটি।

একটা মানুষের উচ্চতার ওপর তার মেরুদণ্ডের পরিমাপ নির্ভর করে। খাটো ও লম্বা মানুষের মেরুদণ্ড যথাক্রমে খাটো ও লম্বা হয়। মাতৃগর্ভ থেকেই মানুষের মেরুদণ্ড তৈরি হয়। গর্ভাবস্থায় মেরুদণ্ড থাকে ইংরেজি E অক্ষরের মতো। স্থিতিস্থাপকতা থাকার জন্য জন্মের পরপরই একটা শিশুর মেরুদণ্ড সোজা হয়ে যায়।

দেহে মেরুদণ্ডের কাজ-
১. কঙ্কালের কাঠামো হিসেবে এবং মাথার খুলিকে ঘাড়ের সঙ্গে শক্তভাবে আটকে রাখতে মেরুদণ্ড সাহায্য করে।
২. স্পাইনাল কর্ড নামক স্নায়ুর মাধ্যমে সারা দেহে সংবেদনশীলতা সঞ্চার করে।
৩. দেহের অজস্র জয়েন্ট মেরুদণ্ডে সংযুক্ত থাকে, ফলে অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোকে সঠিক অবস্থানে রাখে।

মেরুদণ্ডের যত্ন-
১. নিয়মিত হাঁটুন বা ব্যায়াম করুন।
২. বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের আয়রন ও ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমে। অথচ মেরুদণ্ডের প্রধান উপাদান ক্যালসিয়াম ও আয়রন। তাই শৈশব থেকেই আয়রন ও ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খান।
৩. হঠাৎ করে অতিরিক্ত ভারী জিনিস তুলতে যাবেন না।
৪. ওজন কমানোর উদ্দেশ্যে হঠাৎ করে খাবার অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ করবেন না। এতে হাড়ের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
৫. খেলোয়াড় ও ব্যায়ামবিদেরা দেহের শক্তি বৃদ্ধির জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া হরমোন সেবন করবেন না।
৬. মেনোপোজ (চির তরে মাসিক বন্ধ হওয়া) হবার পরে মহিলাদের হাড়ে ক্যালসিয়াম কমে যায়। এই সমস্যা দূর করার জন্য নিয়মিত দুধ ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান।

ডাঃ ফারহানা মোবিন
রেসিডেন্ট মেডিকেল অফিসার, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ
স্কয়ার হাসপাতাল, ঢাকা।
এম.পি.এইচ, সিসিডি (বারডেম হাসপাতাল)
সি-কার্ড (ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন)
কোয়ান্টাম গ্রাজুয়েট (কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন)

সর্বশেষ সংবাদ

মেডিকেল এর আরও সংবাদ