সুস্থ থাকুক আপনার হৃদয়


ই-বার্তা প্রকাশিত: ১৫ই নভেম্বর ২০১৭, বুধবার  | বিকাল ০৪:৩৮ মেডিকেল

ফারহানা মোবিন।। পানির ট্যাংক বিশাল একটা বিল্ডিং এর এর নিচ তালা থেকে সবচেয়ে উপরের ফ্লোরে পানি সরবরাহ করে। আমাদের দেহের হার্ট নামের জরুরী অংগটিও ঠিক সেই কাজটিই করে। পায়ের আঙ্গুল থেকে মাথা পর্যন্ত রক্ত পৌঁছে দেয়। পানির পাইপ লাইনে পানির ময়লা জমলে পানি সঠিকভাবে চলাচল করতে পারে না। ঠিক তেমনি আমাদের শরীরের শিরা উপশিরাতে ময়লা জমলে রক্ত সঠিকভাবে চলতে পারে না।

রক্তের ময়লার নাম atherosclerosis। এই Atherosclerosis ( রক্ত নালী তে জমে থাকা চর্বি বা fat ) তৈরী হয় দেহের তুলনায় অধিক পরিমাণে চর্বি জাতীয় খাবার, মাদক দ্রব্য, ধূমপান থেকে। বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে হার্টের উপর অতিরিক্ত চাপ তৈরী হয়। তখন হার্ট সারা দেহে সঠিকভাবে রক্ত সরবরাহ করতে পারে না। পরিণামে তৈরী হয় হার্টের নানাবিধ অসুখ। যা কখনোই কাম্য নয়।

হার্টের অসুখের জন্য দায়ী বিষয় গুলো হলো,
১) অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও অক্লান্ত পরিশ্রম,
২) ভয়ানক দুশ্চিন্তা,
৩) বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ওজন বেশী,
৪) দীর্ঘ বছর সঠিকভাবে ঘুমের অভাব,
৫) কোন ওষুধের দীর্ঘ বছরের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া,
৬) অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ,
৭) কিডনী ফেইলিয়র,
৮) মাদক দ্রব্য সেবন ও অতিরিক্ত ধূমপান,
৯) পারিবারিক ইতিহাস,
১০) কোন জটিল রোগের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া।

হার্টকে ভালো রাখার জন্য আমাদের করণীয়-
১) বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে
হবে।
২) অতিরিক্ত মিষ্টি ও চর্বি জাতীয় খাবার, মাদক দ্রব্য, ধূমপান পরিহার করতে হবে।
৩) ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে
হবে।
৪) জীবন মানেই একটার পর একটা যুদ্ধ। মানসিক চাপ কমাতে নিয়মিত নিজেকে খুশী রাখা উচিত।
৫) ধর্মের কাজ, মেডিটেশন মানসিক প্রশান্তি দেয়।
৬) পারিবারিক ইতিহাসে হার্টের অসুখ থাকলে আগে থেকেই সচেতন হোন।
৭) হার্টের অসুখ থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নিয়মিত ফলোআপে থাকা টা ভীষণ জরুরী।
৮) প্রতি বছর পুরো দেহের চেকআপ করান। আমাদের দেহ বিশাল এক কারখানা। একটা মেশিন দূর্বল হলে,
আশেপাশের মেশিনে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই সময় থাকতে সচেতন হোন।
৯) অবশ্যই পুষ্টিকর খাবার খাবেন। নিয়মিত দুই লিটার পানি ভীষণ জরুরী। অতিরিক্ত তেল , মশলা , চর্বি জাতীয় খাবার বাদ দিলেই ভালো।
১০) সুযোগ হলেই হাটবেন। খোলা আকাশ এর নীচে হাঁটতে পারলে, খুব ভালো হয়। সুযোগ না থাকলে ঘরের কাজ গুলো নিয়মিত করার চেষ্টা করবেন (ঘর পরিষ্কার করা, কাপড় ধোয়া, ঝাড়ু দেয়া ইত্যাদি। এগুলোতেও শারীরিক ব্যায়াম হয়)। যা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
১১) সঠিক সময়ে ঘুমানোর চেষ্টা করবেন।
১২) সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার হার্টের জন্য ভালো। তবে হৃদরোগ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জীবন যাপন করবেন।
১৩) হতাশা দূর করতে নিজেকে সৃষ্টিশীলতা ও মানবতার কল্যাণে নিয়োজিত রাখবেন। ভালো কাজ আমাদের কে দেয় আত্মতৃপ্তি। মন ভালো থাকলে হার্ট ভালো থাকবে।

আমাদের হৃদয় ভীষণ জরুরী অর্গান। আমরা যখন ঘুমিয়ে থাকি, তখনও আমাদের হৃদস্পন্দন সচল থাকে। এটি থেমে গেলে আমাদের জীবন টাও থেমে যাবে। আমাদের সবার উচিত হার্ট ভালো রাখার উপায় গুলো মেনে চলা এবং অন্যদের সচেতন করা।

ডাঃ ফারহানা মোবিন
রেসিডেন্ট মেডিকেল অফিসার, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ
স্কয়ার হাসপাতাল, ঢাকা।
এম.পি.এইচ, সিসিডি (বারডেম হাসপাতাল)
সি-কার্ড (ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন)
কোয়ান্টাম গ্রাজুয়েট (কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন)

সর্বশেষ সংবাদ

মেডিকেল এর আরও সংবাদ