বন্ধ্যাত্বের কারণ ও প্রতিকার


ই-বার্তা প্রকাশিত: ২৩শে সেপ্টেম্বর ২০১৭, শনিবার  | দুপুর ০১:৩১ মেডিকেল

ই-বার্তা।। কোনো দম্পতি, যেখানে স্ত্রীর বয়স ৩০ বছরের নিচে, তারা যদি এক বছর কোনো জন্মনিয়ন্ত্রক পদ্ধতি গ্রহণ না করে যদি সন্তান ধারণ করতে না পারে, সে ক্ষেত্রে এটিকে আমরা বন্ধ্যাত্ব বা ইনফারটিলিটি বলি। আর যদি স্ত্রীর বয়স ৩০ বছরের বেশি হয়, সে ক্ষেত্রে ছয় মাস চেষ্টা করার পর যদি গর্ভধারণে সক্ষম না হয়, তখন সেটিকে বন্ধ্যাত্ব হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বন্ধ্যত্বকে দুটো ভাগে ভাগ করা হয়। প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি। যখন স্ত্রী কখনোই গর্ভধারণ করে নি, তাকে আমরা প্রাইমারি ইনফারটিলিটি বলে থাকি। আর সেকেন্ডারি ইনফারটিলিটি হোলো যেখানে আগে প্রসব বা অ্যাবরশনের ইতিহাস রয়েছে, কিন্তু আবার দীর্ঘদিন ধরে গর্ভধারণ হচ্ছে না।

বন্ধ্যাত্বের কারণ-
বন্ধ্যাত্বের বেশ কিছু কারণ রয়েছে। যেমন, ছেলেদের ক্ষেত্রে শুক্রাণুর স্বল্পতা বা শুক্রাণু একদমই না থাকা একটি কারণ। মেয়েদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রতি মাসে ডিম্বোস্ফোটন হওয়ার কথা, কোনো কারণে এটি বন্ধ হয়ে যাওয়া বন্ধ্যাত্বের একটি অন্যতম কারণ। এছাড়া মেয়েদের টিউবাল ব্লকেজ থাকলে, জরায়ুতে সমস্যা থাকলে, কোনো টিউমার বড় হয়ে গিয়ে জরায়ুতে থাকলে এর ধারণক্ষমতা কমে গিয়ে অথবা কিছু হরমোনাল সমস্যার কারণে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।
শহরাঞ্চলে মেয়েরা সন্তান নিতে দেরি করে ফেলছে, ক্যারিয়ারে সময় দিতে গিয়ে বয়সটা বেড়ে যাচ্ছে। আর গ্রামে দেখা যাচ্ছে, সংক্রমণের কারণে সমস্যা হচ্ছে। সংক্রমণের জন্য টিউবাল ব্লক হয়ে যাচ্ছে। সঠিক সময়ে ওরা চিকিৎসা নিচ্ছে না। ছেলেদের ক্ষেত্রে মানসিক চাপ একটি বড় ব্যাপার। ছেলেদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, তারা হয়তো দীর্ঘ সময় বাইরে কাজ করছে, ক্লান্ত থাকছে বেশিরভাগ সময়। ধূমপান, দূষণ সবকিছু মিলিয়ে শুক্রাণু ধ্বংস হয়ে যাওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা থাকে।

বন্ধ্যাত্বের প্রতিকার-
এক বছর চেষ্টার পরেও সন্তান না হলে দেরি না করে অবশ্যই দম্পতিকে অনুসন্ধান করতে হবে, যে কেন সন্তান হচ্ছে না। তখন কোনো একটা কারণ পাওয়া গেলে সেভাবে চিকিৎসা করতে হবে।
কোনো দম্পতি বন্ধ্যাত্বের সমস্যায় থাকলে প্রাথমিকভাবে তাদের কয়েকটি ইতিহাস জানতে হবে। তাদের বয়স কতো, এর আগে তাঁদের অন্য কোনো শারিরিক সমস্যা ছিলো কিনা, কোনো অস্ত্রোপচারের করা হয়েছে কিনা,
স্ত্রীর নিয়মিত ঋতুস্রাব হয় কি না। এগুলো থেকে একটি প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায় যে সমস্যাটা কোথায়। তার ওপর ভিত্তি


করেই অনুসন্ধান করতে হবে। যদি দেখা যায় ডিম ঠিকমতো ফুটছে না, সে অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। ছেলেদের ক্ষেত্রে আমরা সিমেন অ্যানালাইসিস করা জরুরী। একটা সিমেন অ্যানালাইসিসে অনেক কিছু বোঝা যায়। আর মেয়েদের ক্ষেত্রে কয়েকটি হরমোনাল পরীক্ষা করতে হয়। কোনো থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা আছে কি না। অথবা ডিম ফুটতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে কি না, জরায়ু ভালো আছে কি না হরমোনাল পরীক্ষা থেকে এসব জানা যায়।
- ছেলেদের ক্ষেত্রে যদি শুক্রাণু গণনায় কম আসে, তখন এটি বাড়ানোর জন্য ওষুধ দেয়া হয়। অনেক সময় একেবারে শুক্রাণু না থাকার সমস্যা থাকে, অনেক সময় এ রকম হয় যে ব্লকেজের কারণে আসতে পারছে না, আবার অনেক সময় দেখা যায় শুক্রাণু তৈরিই কম হচ্ছে। সমস্যা গুরুতর হলে ইউরোলজিস্টের মাধ্যমে কিছু সার্জারি করাতে হয়। অথবা আইভিএফ বা টেস্টটিউব বেবি পদ্ধতি খুব ভালো কাজে দেয়।
- আর মেয়েদের ক্ষেত্রে যদি ডিম ফোটা না হয়, তবে তার জন্য ওষুধ দিই। ডিম্বোস্ফোটন না হওয়ার খুব প্রচলিত একটা কারণ হচ্ছে পলিসিসটিক ওভারি। এখানে রোগীকে বাড়তি ওজন কমাতে হবে এবং সমস্যা অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। প্রাথমিক ভাবে মেটফরমিন জাতীয় মুখে খাওয়ার কিছু ওষুধে সমস্যা দূর হয়ে যায়। এতে কাজ না হলে ইনজেকশন দিতে হয়। যদি তাতেও না হয় তাহলে আরো বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে, সেগুলোতে যেতে হয়।
- অনেক ক্ষেত্রে স্ত্রীর জরায়ুতে সমস্যা থাকে। টিউমার থাকলে অপারেশানের মাধ্যমে টিউমার ফেলে দিলেই গর্ভধারণ হয়ে যাচ্ছে। আর যাদের বাইলেটারাল টিউবার ব্লকেজ আছে, ওদের ক্ষেত্রে সরাসরি টেস্টটিউব বেবিতে চলে যেতে হয়।

বন্ধ্যাত্ব যেন সহজে ধরা পড়ে এবং সে অনুযায়ী যাতে চিকিৎসা নেয়, এ জন্য দম্পতিদের প্রতি আমার পরামর্শ হোলো,
- অনেক দম্পতি জানেন না কোন নির্দিষ্ট সময়ে সহবাসে গেলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে। সেটি জেনে সময় অনুযায়ী চেষ্টা করতে হবে। এর পরও যদি গর্ভধারণ না হয়, এক বছর চেষ্টা করে তাদের অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

ডাঃ ফারহানা মোবিন
রেসিডেন্ট মেডিকেল অফিসার,
স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ, স্কয়ার হাসপাতাল, ঢাকা
এম.পি.এইচ, সিসিডি (বারডেম হাসপাতাল)
সি-কার্ড (ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন)
কোয়ান্টাম গ্রাজুয়েট (কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন)।

সর্বশেষ সংবাদ

মেডিকেল এর আরও সংবাদ