একটা গোল্ডলিফ শেষ করার গল্প


ই-বার্তা প্রকাশিত: ২৪শে সেপ্টেম্বর ২০১৭, রবিবার  | দুপুর ০২:৪৯ দেশ

আশিকুর রহমান ।। তারিখটা মনে নেই তবে এইটুকু মনে আছে, বছরের শুরুর দিকের কোন এক বিকেল। ধানমন্ডি ৪/এ-এর একটা চায়ের দোকানের পাশে বসে ছিলাম, চায়ের কাপটা ডানহাতে আর বাঁ হাতে একটা গোল্ডলিফ। যতদূর মনে পরে কারো জন্য অপেক্ষা করছিলাম।

৪/এ-এর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়ায় ওই চায়ের দোকানগুলোতে বসা হয় মাঝে মধ্যেই। কখনো একা, কখনো বা দল বেঁধে। বসে থাকার সময় রাস্তার ধারে পার্ক করে রাখা গাড়িগুলোর নড়াচড়া দেখি। ঠিক দেখি না, গাড়ির হর্ণ চোখ কেড়ে নেয়। মাঝে মধ্যেই আবার চোখ কেড়ে নেয় গাড়ি থেকে বের হওয়া সুন্দরী কোন রমণী।

সেদিনও আমার চোখ গিয়েছিলো একটা গাড়ির দিকে। তবে ওইদিন চোখ কাড়েনি কোন রমণী বা কান ঝালাপালা করা কোনো হর্ণ। কেড়েছিলেন এক মধ্যবয়সী নারী। বয়স আনুমানিক ৪৫ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। সুন্দর একটা শাড়ী, রঙ বোধয় অফ হোয়াইট, ঠিক বয়সের সাথে মানিয়ে নেয়া। গাড়ির দরজাটা লাগিয়ে বসে ছিলেন তিনি। গাড়ির জানালা দিয়ে দেখতে পাচ্ছিলাম তাঁকে। আন্দাজ করলাম, তিনিও কারো জন্য অপেক্ষা করছেন, বোধয় ভদ্রমহিলার ছেলে অথবা মেয়ে কেউ একজন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। গাড়ির ড্রাইভার বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। হাতে মাল্টিমিডিয়া একটা মোবাইল ফোন।

হঠাৎ আমার আর ড্রাইভার দুজনেরই চোখ কেড়ে নিলেন ভদ্রমহিলা। গাড়ির দরজাটা খুলে ড্রাইভারকে ডেকে বললেন এক কাপ চা আনতে। যথারীতি ড্রাইভার তাঁর উপর অর্পিত কাজ করতে মন দিল, আর আমি মন দিলাম আমার গোল্ডলিফে। গোল্ডলিফের অর্ধেকটা তখনো বাকি। চা এনে ড্রাইভার তার আগের জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালেন, চা খাওয়া শুরু করলেন ওই ভদ্রমহিলা, আমি গোল্ডলিফ শেষ করার কাজে নেমে পরলাম।

রিকশার বেলের আওয়াজে এবারে হঠাৎ আমার চোখ গেলো অন্য একটি চায়ের দোকানের সামনে। নাহ, এবারো কোনো সুন্দরী রমণী চোখ কাড়েনি। চোখে পড়লো রিকশায় বসা আরেকজন মহিলা। এনার বয়স আগের জনের থেকে কিছুটা কমই মনে হোলো। আনুমাণিক ৩০ থেকে ৩৫ বছর হবে। কানে হেডফোন, খোলা চুল, কপালে খয়েরি রঙের টিপ আর পরনে কমলা রঙের একটি সালোয়ার কামিজ। বোঝা যাচ্ছিলো ওই মহিলা নিজস্ব কোনো কাজে রিকশাটা দাঁড় করিয়েছেন। রকশায় বসে থেকেই ভদ্রমহিলা রিকশাওয়ালা কে বললেন, মামা দুইটা চা আনো। রিকশাওয়ালা বললেন, “মামা আমি খামু না, আপনে খান”। কিন্তু ভদ্রমহিলা জোর দিয়েই ওই রিকশাওয়ালাকে বললেন দুই কাপ চা আনতে।

ততোক্ষণে গাড়িতে বসে থাকা ভদ্রমহিলার চা খাওয়া শেষ, তিনি আবার ড্রাইভারকে ডেকে চায়ের কাপ ফেরত দিলেন। কিন্তু এবার আমার চোখ আর তাঁর দিকে বেশীক্ষণ থাকলো না। কারন রিকশাওয়ালা তখন দুইকাপ চা নিয়ে চলে গেছে রিকশার সামনে। রিকশায় বসা মহিলাকে এক কাপ দিয়ে নিজে এক কাপ খাওয়া শুরু করলো সে। গাড়ির থেকে এই রিকশার দৃশ্যই আমাকে টানছিলো।

গাড়ির হর্ন আবারো আমার দৃষ্টি কেড়ে নিলো, গাড়িতে বসা মহিলার মেয়ে চলে এসেছে ততোক্ষণে, ড্রাইভারও গাড়িতে বসে পরেছে। গাড়ি চলতে শুরু করলো, আমার গোল্ডলিফটা শেষ প্রায়। অভ্যাসবশত সিগারেট শেষ হওয়ার পরেও টেনে যাচ্ছিলাম। এদিকে রিকশাওয়ালাও চায়ের কাপগুলো ফেরত দিয়ে আবার রিকশাতে চড়ে বসলো। রাস্তায় মিলিয়ে গেলো রিকশাটা। ফুরিয়ে যাওয়া গোল্ডলিফটা ফেলে আমিও উঠে দাঁড়ালাম। নিজের মনে হাসলাম। পরক্ষনেই আরেকটি হর্ণের শব্দ কানে আসলো।

সর্বশেষ সংবাদ

দেশ এর আরও সংবাদ