দূর করুন চোখের নিচের কালি- ডাঃ ফারহানা মোবিন


ই-বার্তা প্রকাশিত: ৪ঠা অক্টোবর ২০১৭, বুধবার  | বিকাল ০৪:৫৭ লাইফ

ই-বার্তা।। সুন্দর এক জোড়া চোখ সবারই কাম্য। চোখকে সুন্দর করে উপস্থাপন করে তোলার জন্য আছে অনেক প্রসাধনী আর অপার প্রচেষ্টা। চোখকে সুস্থ ও সুন্দর রাখার জন্য চোখ সহ চোখের পাপড়ি ও চোখের উপরিভাগ এবং নীচের মাংসপেশীর যত্ন নেয়া প্রয়োজন। বিভিন্ন কারণে চোখের নীচে কালি জমতে পারে বা চোখের পাপড়িতে ময়লা জমে অসুখ হয়। সামান্য কিছু সচেতনতা ও পরিচর্যা আপনার চোখকে করবে আরো বেশী আকর্ষণীয়।

চোখের নীচে কালি জমে যাবার কারণ-
১। অতিরিক্ত রাত জেগে পড়া, টিভি দেখা বা কম্পিউটারে কাজ করা। অতিরিক্ত
পরিশ্রমের জন্যও চোখের নীচে কালি জমতে পারে। যদি সঠিক সময়ে খাওয়া
না হয় দীর্ঘদিন যাবৎ এমন অনিয়ম হলে এই সমস্যা হয়।

২। অতিরিক্ত অ্যাসিডিটির সমস্যাতেও এমন হয়। দেহ থেকে প্রচুর
পরিমাণে সোডিয়াম ক্লোরাইড (দেহের জন্য জরুরী উপাদান) বের হয়ে
গেলে রক্তে অম্ল ও ক্ষারের সাম্যাবস্থাতে বিঘ্ন ঘটে। তখন প্রচুর পরিমাণে লবণ
পানি বা পানি খেতে হয়। এই সমস্যাতে চোখের নীচের অংশ বসে যায়। চোখ দেখলে তখন মনে হয় যেন গর্ত হয়ে গেছে। অতিরিক্ত
ঘেমে যাবার পরে এই সমস্যা হতে পারে।

৩। টাকা বাঁচানোর জন্য যেন তেন প্রসাধনীর প্রতিক্রিয়া স্রূপ চোখে কালি জমতে
পারে। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা বা মানসিক অবসাদ, পারিবারিক ভাবে চোখের
নীচের গঠন, দীর্ঘ বছর যাবৎ উচ্চ রক্তচাপ বা জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার জন্যও
এমন হতে পারে। তবে সবার ক্ষেত্রে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল (ট্যাবলেট) বা উচ্চ
রক্তচাপের ওষুধের জন্য চোখের নীচে কালি জমে না।

৪। সঠিকভাবে মুখ পরিষ্কার না করলে দিনের পর দিন ময়লা জমে চোখের নীচে
কালি, চোখের পাতাতে ইনফেকশানও হতে পারে। চোখের মেকআপ সঠিকভাবে
নিয়মিত পরিষ্কার না করলেও চোখের পাপড়িতে রোগ জীবাণু আক্রমণ করে,
হতে পারে ইনফেকশান বা এ্যালার্জি জাতীয় যাবতীয় সমস্যা।

৫। মেয়াদ উত্তীর্ণ কমদামী, অখ্যাত কোম্পানীর প্রসাধনীও তৈরী করতে পারে
চোখের নীচে কালি। মারাত্বক ডায়রিয়া, বড় কোন অপারেশন, গর্ভাবস্থা,
সন্তান জন্ম দানের পরে, অতিরিক্ত বমি বা ডায়রিয়া এসব কিছু চোখের নিচের কালির জন্য দায়ী।

৬। ফেসিয়াল করার সময় চোখের নরম মাংসপেশীতে অসাবধানতা বশত ঘষাঘষির জন্যও দাগ হতে পারে। প্রথর রোদের তাপে দীর্ঘক্ষণ থাকলে চোখের উপরে কালি জমে। দীর্ঘদিন কড়া রোদে থাকলে দাগ স্থায়ী হয়ে যায়। রক্ত শূন্যতা, হঠাৎ করে প্রচুর ব্যায়াম, আবহাওয়ার পরিবর্তনও এই অবস্থার জন্য দায়।

চোখের নীচে কালি প্রতিরোধে করণীয়-

১। নিয়মিত মুখ, মাথা সহ পুরো শরীর পরিষ্কার রাখতে হবে। সৌন্দর্যের
জন্য প্রসাধনী ব্যবহারের পূর্বে যাচাই, বাছাই না করে ব্যবহার
করবেন না। সানস্ক্রীন চোখের নীচে ও পাতার উপরে লাগাবেন না। পরিহার
করুন মেয়াদ উত্তীর্ণ প্রসাধনী, খাবার, অতিরিক্ত রৌদ্রের তাপ, দীর্ঘ দিন
যাবৎ রাত জেগে পড়া বা ল্যাপটপে কাজ করা, হঠাৎ করে কঠোর ভাবে ব্যায়াম
বা ওজন নিয়ন্ত্রণ করা। ধীরে খাবার নিয়ন্ত্রণ করুন। হঠাৎ অতিরিক্ত ব্যায়াম ও
খাবার নিয়ন্ত্রণে বিরূপ প্রভাব পড়ে ত্বক, চুল, নখ, চোখের নীচের
মাংসপেশী ও হাড়ের উপর।

২। এই প্রসাধনী দীর্ঘদিন যাবৎ ব্যবহারের পরিবর্তে তিনমাস অন্তর অন্তর ভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রসাধনী ব্যবহার করুন। অতিরিক্ত রাত জাগা, দুশ্চিন্তা, দীর্ঘ বছর যাবৎ
জন্ম নিয়মন্ত্রণ বড়ি পরিহার করুন। পান করুন প্রচুর পরিমাণে পানি। এতে
অ্যাসিডিটি বা গ্যাসট্রিকের পরিমাণও কমবে। আর পানি দেহের
প্রতিটি কোষে অক্সিজেন পৌছে দেয়। নিয়মিত প্রচুর পানি পান করলে
এবং তৈলাক্ত খাবার তুলনামূলক ভাবে কম খেলে চোখের নীচে কালি পড়বে কম।

৩। অতিরিক্ত ঘেমে যাবার পরে ওরস্যালাইন বা লবণ পানি খান। উচ্চ রক্তচাপ থাকলে লবণ পানির পরিবর্তে লেবুর শরবত খেতে পারেন। খুব বেশি ঘেমে গেলে রক্তের চিনির মাত্রা সাধারণত কমে যায়। এক্ষেত্রে চিনির শরবত খেতে পারেন। (ডায়াবেটিস থাকলে না খাওয়াই উত্তম)।তবে পরিমাণে সামন্য চিনি খাওয়াই ভালো। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা ও ব্লাড প্রেসার
মাপাবেন। দীর্ঘ বছর যাবৎ একই রকম ডায়াবেটিস বা প্রেশারের ওষুধ না
খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। অনেক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় চোখের
নীচে কালি জমতে পারে।

৪। দৈনিক রাতে ছয় থেকে সাত ঘন্টা ঘুম ভীষণ জরুরী। বাহির থেকে এসে সঠিক ভাবে মুখ ধুয়ে ফেলুন। মেকআপ থাকলে তা ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। অতিরিক্ত
প্রসাধনীর পরিবর্তে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম থাকে। রোদে বের হলে ছাতা বা সানগ্লাস ব্যবহার করুন।

৫। ওজন নিয়ন্ত্রণ ও ব্যায়াম এর মাত্রা অল্প থেকে ধীরে ধীরে বাড়ান। মৌসুমী ফল,
শাক-সব্জি দেহের প্রতিটি অঙ্গের জন্য ভীষণ জরুরী। বিশেষত শাক, ছোট
মাছ চোখের পাতা ও মাংসপেশীর পুষ্টির জন্য অপরিহার্য্য। আর দূর করতে হবে
বিষন্নতা। বিষন্নতাতেও চোখের নিচে কালি জমে।

৬। অনেকটা সময় কাজ করলে কাজের ফাঁকে ১৫-২০ মিনিট চোখের পাতা বন্ধ করে রাখুন। একটা তুলা হালকা ভিজিয়ে চোখের উপরে দিয়ে রাখতে পারেন। এতে চোখের ময়লা পরিষ্কার হয় আর সেইসাথে চোখের স্নায়ু ও মাংসপেশীর বিশ্রাম হবে।


ডাঃ ফারহানা মোবিন
এমবিবিএস (ডি.ইউ), পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন (পাবলিক হেল্থ),
পিজিটি (গাইনী এন্ড অবস, স্কয়ার হাসপাতাল),
রেসিডেন্ট মেডিকেল অফিসার (গাইনী এন্ড অবস),
স্কয়ার হাসপাতাল, ঢাকা, বাংলাদেশ।
ডায়াবেটোলোজি, বারডেম হাসপাতাল (অনগোয়িং)
ই-মেইল- farhanamobin31@yahoo.com
চেম্বারঃ
ফ্ল্যাট নং-২০৬, বিল্ডিং নং-৪,
জাপান গার্ডেন সিটি,
মোহাম্মদপুর, ঢাকা।

সর্বশেষ সংবাদ

লাইফ এর আরও সংবাদ