বেড়ে গেছে বন্ধু, কমে গেছে বন্ধুতা


ই-বার্তা প্রকাশিত: ১৭ই অক্টোবর ২০১৭, মঙ্গলবার  | দুপুর ০২:২৬ দেশ

ই-বার্তা।। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইন্সট্রাগ্রাম, ভাইবার, ইমো নামগুলি শুধু পরিচিতই না বরং জনপ্রিয়তার শীর্ষে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বলেই এই নামগুলোকে আমরা জানি। এখন প্রশ্ন হোলো, সামাজিকতা কি এটা আমরা কতজন জানি আর জানলেই বা কতটুকু জানি?

আমার কাছে সামাজিকতার মানে পরিচিত, অপরিচিত সকলের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখা। একজন মানুষ তাঁর পরিচিত কাউকে হঠাৎ দেখলে তাঁরা একে অন্যের দিকে তাকিয়ে হাসবে। কুশল বিনিময় করবে। হাতে সময় থাকলে হয়ত দু-চারটা কথা বলবে। একে অন্যের বিপদে আপদে পাশে দাঁড়াবে। প্রতিবেশীর সাথে সুন্দর সম্পর্ক থাকবে। শুধু তাই নয়, নিজের পরিবারের সাথে সময় কাটানো সামাজিকতার অন্যতম একটি উপাদান। প্রতিদিন পরিবারের সদস্যদের সাথে বসে অন্তত এক ঘন্টা গল্প করলে একে অন্যের সম্পর্কে ভালোমত জানতে পারবে। কারো কোন সমস্যা আছে কিনা জানতে পারবে এবং সাহায্যও করতে পারবে। বন্ধুদের সাথে আড্ডা হবে সামনাসামনি কোন চায়ের দোকানে, ক্যাম্পাসে বা কারো বাড়িতে। একেই না বলে সামাজিকতা!

কিভাবে ভার্চুয়াল জগতের আড্ডাকে আমরা সামাজিক বলতে পারি? যখন একজন সন্তান তাঁর বাবা-মায়ের সামনে বসে সমানে মোবাইল নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ঘোরাফেরা করে তাহলে সে বুঝতেই পারেনা আসলে সে কতটা অসামাজিক একটি কাজ করছে। ঠিক এই কাজটিই বন্ধুদের আড্ডার মাঝে অথবা বাসায় মেহমান আসলে বা কারো বাসায় বেড়াতে গিয়ে করাটাও সমানভাবে অসামাজিকতার লক্ষন।

একথা স্বীকার করতেই হয় যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো আমাদের অনেক দূরের বন্ধু-আত্মীয় স্বজন ও আমাদের মাঝে একটি সেতুর মত কাজ করছে। এছাড়াও অনেক নতুন নতুন বন্ধু বানাতে সাহায্য করছে। কিন্তু দূরের মানুষদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করার নামে আমরা আমাদের আশেপাশের মানুষদেরকেই বঞ্চিত করে ফেলছি না তো? এছাড়া আরো আশ্চর্যজনক কথা হোলো, আমাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন অনেক বন্ধু আছে যাঁদের সাথে আমরা ঘন্টার পর ঘন্টা অনলাইনে চ্যাট করি। কিন্তু সামনা সামনি তাঁদের সাথে কখনো দেখা হয়ে গেলে আমরা প্রচন্ড অস্বস্তিতে পরি। মনে হয় কখন তাঁর সামনে থেকে যাব। একই অস্বস্তি দেখা যায় অপরজনের চোখে-মুখেও। কোনমতে মাথা নিচু করে পাশ কাটিয়ে না দেখার ভান করে চলে গেছে এমন ফেসবুক বন্ধু কারো নেই সেকথা অবিশ্বাস্য। অথচ বেপারটা কত সুন্দর হোতো যদি একজন আরেকজনকে দেখে হাসিমুখে কথা বলতো। এই আচরণ থেকেই তো প্রমাণ মেলে আসলে ভার্চুয়াল জগৎ আমাদের সামাজিক নয় বরং অসামাজিক করে তুলছে। এমনকি অদ্ভুত শোনালেও একথা সত্যি যে, ফোন করে কথা বলার থেকেও মেসেজে কথা বলে আমরা বেশি স্বস্তি পাই।

চিন্তা করে দেখুন তো, শেষ কবে বন্ধুর খোঁজ নিতে তাঁর বাড়ি পর্যন্ত গিয়েছেন? শেষ কবে মোবাইল ফোন দূরে রেখে বাবা-মা ও অন্যান্য কাছে মানুষদের সাথে আয়েশ করে বিকালের চা খেয়েছেন?

এই সুন্দর সুন্দর মূহুর্তগুলো যেন ইতিহাস হয়ে না যায় বা রুপকথার গল্পের তালিকায় জমা না হয়ে যায়। আসুন আমরা ভার্চুয়াল জগৎ থেকে বেড়িয়ে এসে আমাদের সম্পর্কগুলোর সাথে বন্ধুতা বজায় রাখি। বন্ধুর সাথে ছোট একটি স্ক্রিনে আঙুল রেখে নয়, বন্ধুর কাঁধে হাত রেখে আড্ডা দেই। মাঝে মাঝে কাছে আত্মীয়দের বাসায় চলে যাই তাঁদের খোঁজ নিতে। দেখবেন, আপনার এতটুকু প্রচেষ্টায় কত মানুষের মুখে হাসি ফুটবে! আসুন আমরা একসাথে কাটানো মুহুর্তগুলোকে মনে রাখার মত করি। সত্যিকার সামাজিক হয়ে উঠি।

সর্বশেষ সংবাদ

দেশ এর আরও সংবাদ