পুরুষের বেশে জীবন কাটানো ৫ নারী


ই-বার্তা প্রকাশিত: ২৪শে অক্টোবর ২০১৭, মঙ্গলবার  | সন্ধ্যা ০৬:৩২ আন্তর্জাতিক

ই-বার্তা।। নারী ও পুরুষ সৃষ্টিকর্তার অপার সৃষ্টি। সৃষ্টিকর্তা এদেরকে একে অন্যের পরিপূরক করে সৃষ্টি করেছেন। নারী বিহীন পুরুষ যেমন অপূর্ণ, ঠিক তেমনি পুরুষ বিহীন নারীও অপূর্ণ। কিন্তু এই পৃথিবীতে এমন বেশ কিছু নারী আছেন যারা পুরোটা জীবন পুরুষের বেশে কাঁটিয়ে দিয়েছেন। আসুন জেনে নেই এমন নারীদের সম্পর্কে।

১. জেমস ব্যারি
জেমস ব্যারি কাজ করতেন ব্রিটিশ আর্মির মিলিটারি সার্জন হিসেবে। ক্যারিয়ারের শেষের দিকে তিনি মিলিটারি হাসপাতালগুলোর ইন্সপেক্টর জেনারেল হয়েছিলেন। তার কর্মস্থল ছিলো ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকায়। বলা হয়ে থাকে, তিনিই প্রথম ব্রিটিশ সার্জন, যিনি সফলতার সাথে আফ্রিকায় সিজারিয়ান সেকশন করাতে পেরেছিলেন। অপারেশনের পর মা ও সন্তান দুজনই বেঁচে ছিলো।
মজার ব্যাপার হলো, জেমস ব্যারি আসলে কোনো পুরুষ ছিলেন না। জন্মের সময় তার নাম ছিলো মার্গারেট অ্যান বাল্কলে, অর্থাৎ একজন নারী। মার্গারেটের স্বপ্ন ছিলো চিকিৎসাশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনার, যা তৎকালীন নারীদের জন্য সম্ভবপর ছিলো না। এজন্যই তার এমন ছদ্মবেশ ধারণ! ১৮৬৫ সালের ২৫ জুলাই আমাশয়ে ভুগে মারা যান মার্গারেট। তার দেহ শেষকৃত্যানুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুতকরণের দায়িত্বে নিয়োজিত ভৃত্যই সর্বপ্রথম জানতে পারেন, জেমস ব্যারি আসলে কোনো পুরুষ নন, তিনি একজন নারী!

২. ডেনিস স্মিথ
তখন চলছিলো ১ম বিশ্বযুদ্ধ। উনিশ বছর বয়সী প্যারিসের বাসিন্দা ডরোথি লরেন্সের শখ ছিলো যুদ্ধ বিষয়ক সাংবাদিক হওয়ার। কিন্তু এ শখের পথে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় তার লিঙ্গ পরিচয়। তারপরও নাছোড়বান্দা ছিলেন ডরোথি। তিনি কোনোভাবে দুজন সৈন্যকে রাজি করালেন যেন তারা তাকে সৈনিকদের ইউনিফর্ম এনে দেয়। সেই সাথে গায়ে রঙ মেখে শরীর তামাটে বর্ণের করে নিলেন তিনি। নকল পরিচয়পত্র বানিয়ে প্রাইভেট ডেনিস স্মিথ পরিচয়ে লাইচেস্টারশায়ার রেজিমেন্টে নাম লেখান তিনি, চলে যান সমের যুদ্ধক্ষেত্রের ফ্রন্ট লাইনেও।
১০ দিন পর বোধোদয় হয় ডরোথির। তিনি বুঝতে পারেন, তার প্রকৃত পরিচয় ফাঁস হয়ে গেলে তাকে সাহায্য করা লোকগুলোই বিপদে পড়বে। এজন্য তিনি নিজে থেকেই কোম্পানির প্রধানদের কাছে গিয়ে নিজের সত্য পরিচয় জানিয়ে দেন। সেনা কর্মকর্তারা এটা ভেবে শঙ্কিত হয়েছিলেন যে, ডরোথির এমন কর্মকান্ডের কথা প্রকাশিত হলে আরো অনেকেই হয়তো এমন প্রতারণার আশ্রয় নিতে পারে। সেজন্য তারা তাকে দিয়ে হলফনামায় সই নিয়ে নেয় যে, এ বিষয়ে তিনি কোনোকিছুই লিখতে পারবেন না। ফলে দীর্ঘদিন এ সম্পর্কে কিছুই প্রকাশিত হয় নি। যুদ্ধ শেষ হবার অনেক বছর পর এ বিষয়ে ডরোথির লেখা প্রকাশ পেয়েছিলো।

৩. জেমস গ্রে
১৭২৩ সালে ইংল্যান্ডের ওরচেস্টারে জন্ম হয় হান্নাহ স্নেলের। ছোটবেলায় ছেলেদের মতো যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলার নেশা ছিলো তার। ১৭৪৪ সালে জেমস সামস নামে এক লোকের সাথে বিয়ে হয় হান্নাহর। বিয়ের দু’বছরের মাথায় তাদের ঘর আলো করে আসে এক কন্যাসন্তান। কিন্তু মাত্র এক বছরের মাথায় মারা যায় মেয়েটি। এরপর হান্নাহর স্বামী তাকে পরিত্যাগ করে চলে যায়।
স্বামীকে খুব ভালোবাসতেন হান্নাহ। তার স্বামীর এক ভাই ছিলো জেমস গ্রে নামে। জেমসের কাছ থেকে নিজের নিরাপত্তার জন্য পুরুষদের একটি স্যুট নিয়ে তিনি বেরিয়ে পড়েন স্বামীর খোঁজে। তখনই তিনি নিজের নাম হান্নাহ স্নেল থেকে পাল্টে করে নেন জেমস গ্রে।
এরপর আর বাড়ি না ফিরে হান্নাহ চলে যান পোর্টসমাউথে, জেমস গ্রে নামে যোগ দেন রয়্যাল মেরিনে। পরবর্তী সময়ে তিনি দু’বার যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। এ দুটি যুদ্ধ মিলিয়ে মোট ১১ বার পায়ে এবং ১ বার কুঁচকিতে আঘাত পেয়েছিলেন তিনি। তবে কুঁচকির অপারেশনের সময় কীভাবে তিনি নিজের লিঙ্গের ব্যাপারটি ম্যানেজ করতে পেরেছিলেন তা আজও জানা যায় নি। পরবর্তীতে ১৭৫০ সালে তার ইউনিট ফিরে এলে তিনি তাদের কাছে নিজের প্রকৃত পরিচয় প্রকাশ করেন।

৪. অ্যালবার্ট ক্যাশিয়ার
১৮৪৩ সালে জন্ম হয় জেনি আইরিন হজার্সের। তার ইচ্ছে ছিলো সামরিক বাহিনীতে যোগ দেয়ার, কিন্তু স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো আইন। এজন্য ১৮৬২ সালে পুরুষের ছদ্মবেশে অ্যালবার্ট ক্যাশিয়ার নাম নিয়ে আইরিন নাম লেখান ৯৫ তম ইলিনয় ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টে। এই রেজিমেন্টের দায়িত্বে ছিলেন ভবিষ্যতের মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইউ. এস. গ্র্যান্ট। তারা ৪০টির মতো যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলো। প্রকৃত পরিচয় লুকিয়ে রাখতে আইরিন অন্যান্যদের সাথে তুলনামূলক কম কথা বলতেন।
১৯১০ সালে এক সড়ক দুর্ঘটনায় তার পা ভেঙে যায়। চিকিৎসা করাতে গেলে ডাক্তার তার আসল লিঙ্গ পরিচয় জেনে যান। তবে আইরিনের অনুরোধেই তা গোপন রাখা হয়। ১৯১১ সালে তিনি সৈনিকদের বৃদ্ধকালীন থাকার জায়গাতে চলে যান। সেখানে একসময় তিনি মানসিক ভারসাম্য হারাতে শুরু করেন। তখন একদিন তাকে গোসল করাতে নিয়ে গেলে তার লিঙ্গের ব্যাপারটি সবাই জেনে যায়। ১৯১৫ সালে মারা যান আইরিন। তার সমাধিফলকে ‘অ্যালবার্ট ডি. জে. ক্যাশিয়ার’ এবং ‘জেনি আইরিন হজার্স’- এ দুটো নামই খোঁদাই করা আছে।

৫. ব্র্যান্ডন টিনা
১৯৭২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেব্রাস্কা অঙ্গরাজ্যের রাজধানী লিঙ্কনে জন্ম নেয় একটি মেয়ে। বাবা-মা শখ করে মেয়ের নাম রাখেন ব্র্যান্ডন টিনা। ছোটবেলা থেকেই মেয়েটি বেশ দূরন্ত স্বভাবের ছিলো। আত্মীয়রা তাই নামের মেয়েলি ‘টিনা’ অংশের বদলে তাকে পুরুষালি ‘ব্র্যান্ডন’ নাম ধরেই ডাকতো। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, শৈশবে একবার এক আত্মীয়ের হাতে যৌন নিপীড়নের শিকার হয় টিনা।
নতুন জায়গায় গিয়ে নিজেকে পুরোপুরি পাল্টে ফেলেন টিনা। পুরোদস্তুর পুরুষালি বেশভূষা ধারণ করেন তিনি, চলাফেরা করতে থাকেন পুরুষদের মতোই। কারাগারে সাজা ভোগ করে আসা জন লটার এবং মার্ভিন টম নিসেন নামে দুই ব্যক্তির সাথে খাতির হয় তার। এমনকি লানা টিসডেল নামে এক মেয়ের সাথেও সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন টিনা! মজার ব্যাপার হলো, টিনার সঙ্গী-সঙ্গিনীদের কেউই বুঝতে পারে নি যে তিনি আসলে একজন নারী। একবার চেক জালিয়াতির অভিযোগে জেলে যেতে হয় টিনাকে। তাকে জামিনে ছাড়িয়ে আনতে গিয়েছিলো তারই বান্ধবী লানা। জেলে গিয়ে টিনাকে নারীদের সেলে দেখে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যায় তার কাছে। এরপর থেকে আর কোনোদিনই লানা টিনার সাথে দেখা করে নি।

এছাড়াও পুরুষের বেশে থাকা নারীদের তালিকায় আরও আছেন বিলি টিপ্টন, শেভালিয়র ডি’ইয়ন, মালিন্ডা ব্লালক, ম্যারিনাস, হেলেন ক্লার্ক, ফ্লোরেনা বুডউইন প্রমুখ।

সর্বশেষ সংবাদ

আন্তর্জাতিক এর আরও সংবাদ