গর্ভপাত এবং মিন্সট্রুয়াল রেগুলেশান, দুটিই কি হত্যা?


ই-বার্তা প্রকাশিত: ১লা নভেম্বর ২০১৭, বুধবার  | বিকাল ০৪:৫১ মেডিকেল

ই-বার্তা।। গর্ভপাত শব্দটি শুনলেই কেমন একটা নিষ্ঠুর নিষ্ঠুর ভাব মনে আসে। নিজের গর্ভের সন্তানকে অনেক সময় অনেক কারণে মা পৃথিবীতে আসতে দিতে চায় না। তখনই সেই মাকে মুখোমুখি হতে হয় এই নির্মম শব্দটির সাথে। জীবনে কিছু সময় আসে যখন গর্ভপাত না করেও উপায় থাকে না।

আমাদের সমাজে গর্ভপাত গোপনীয় একটি বিষয়। বিপদ, ভয়, সংকোচ, ঘৃণা, লজ্জা এরকম হাজারো নেগেটিভ এপ্রোচের কারণেই একটি মেয়ে তার গর্ভের সন্তানকে অনেক সময় নষ্ট করে ফেলতে চান, কোনও কোনও সময় বাধ্য হন, কখনও দেখা যায় মেয়েটি বাজে কোনও ঘটনার শিকার আবার কখনো মেয়েটির শরীর হয়তো পক্ষে থাকেনা। অর্থাৎ স্বাস্থ্যগত কারণে যেমন, জটিল হৃদরোগ, অনিয়ন্ত্রিত উচ্চরক্তচাপ, অতিরিক্ত ডায়াবেটিস ইত্যাদির কারণে যদি মায়ের স্বাস্থ্যহানির আশংকা থাকে তখন চিকিৎসকের পরামর্শেই গর্ভপাত করানো হয়। তবে এক্ষেত্রে রোগীকে অবশ্যই রোগের জন্য সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের কাছ থেকে অনুমতি আনতে হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গর্ভপাতকে সব সময়ই খারাপ চোখে দেখা হয়। অবিবাহিত ও অনৈতিক সম্পর্কের মাধ্যমে হওয়া গর্ভাবস্থা তো দূরে থাক, এমনকি বিবাহিত দম্পতিও এই সমস্যা থেকে মু্‌ক্ত নয়। আবার সরকারিভাবে গর্ভপাত এখনো বৈধতাই পায়নি। অদক্ষ গর্ভপাতকে এড়ানোর জন্যই সরকারী ভাবে মিন্সট্রুয়াল রেগুলেশানকে বৈধ করা হয়েছে। এখন জানা দরকার মিন্সট্রুয়াল রেগুলেশান জিনিসটা আসলে কি?


এম আর-
মিন্সট্রুয়াল রেগুলেশান (এম আর) হোলো প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর মাসিক নিয়মিত করণের একটি পদ্ধতির নাম। একজন নারীর যখন স্বাভাবিক মাসিক বন্ধ থাকে (গর্ভধারণ করলে বা অন্য কোনো কারণে), তখন তিনি এম আর করাতে পারবেন। শেষ মাসিকের ছয় থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে ড্রপড মাসিক কে নিয়মিত করার নামই এম আর। সেখানে গর্ভের সন্তান এল কি এল না এটা কোন বিষয়ই না। ওষুধের পাশাপাশি সার্জারির মাধ্যমেও এম আর করা যায়। প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে সরকারি ভাবে এম আর সেন্টার কাজ করে। সেখানে গর্ভপাতের কাজ করে মূলত স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

- এম আর ও গর্ভপাত কি এক?
এম আরকে গর্ভপাত বলা ঠিক না। কারণ প্রথমত এটি নারীর মাসিক স্বাভাবিক রাখার জন্য একটা চিকিৎসা। মাসিক নিয়মিত করনের এই পুরো প্রক্রিয়াটিই সরকার নিয়ন্ত্রণ করে। সারা দেশে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীদের দ্বারা মাসিক নিয়মিত করন বা এম আর করানো হয়। তবে আমাদের দেশের মেয়েরা সহজেই এম আর করে ফেলতে পারে এটাও একটা খারাপ দিক কারণ, অনিচ্ছায় বা অসচেতনভাবে কেউ গর্ভ ধারণ করে ফেললে এম আর করিয়ে নেন। এটা নারীর স্বাস্থ্যকে ঝুঁকিতে ফেলে দেয়। এছাড়া গর্ভ ধারণের ফলে যদি কেউ এম আর করান তাহলে সেটা নিশ্চিতভাবে গর্ভপাত। কারন যখন এম আর করানো হয় তখন ইতোমধ্যে গর্ভে একটা প্রাণের সঞ্চার হয়ে যায়।

গর্ভ ধারণের ছয় থেকে আট সপ্তাহ পর্যন্ত যদি কেউ প্রেগনেন্সী টার্মিনেট করতে চায় তবে তা করতে পারা অবশ্যই তার অধিকার। গাইনি বিশেষজ্ঞের মতে গর্ভধারণের ২ মাসের মধ্যে গর্ভপাত ইচ্ছে করলেই করানো যেতে পারে। সরকার গর্ভপাতকে কখনোই আইনসিদ্ধ বলছে না। বার বার এম আর করানো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

সন্তান হলো মানুষের স্বাভাবিক যৌনজীবনের অনন্য সার্থকতা। সন্তান ধারন একটি মেয়ের জীবনের সব থেকে বড় সার্থকতা। সেই মা যখন তার গর্ভের সন্তানকে নষ্ট করে ফেলতে চান কিংবা বলা যায় মেরে ফেলতে চান সেটা নিশ্চয়ই শুধু সামাজিক আইন দিয়ে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। বদলাতে হবে মানসিকতাকে এবং সমাজকে।

সর্বশেষ সংবাদ

মেডিকেল এর আরও সংবাদ