গর্ভকালীন সময়ে ব্যায়ামে পাবেন ১০ উপকারিতা


ই-বার্তা প্রকাশিত: ১৬ই আগস্ট ২০১৭, বুধবার  | দুপুর ০১:২১ মেডিকেল

ই-বার্তা।। গর্ভাবস্থায় যাতে কোন অঘটন না ঘটে এবং সুস্থ্য সবল সন্তান জন্ম নেয়, এই একটিই চাওয়া একজন মায়ের ও তার আশেপাশের মানুষদের।

এজন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত বিশ্রাম, সুষম খাবারের ও সেই সাথে হালকা ব্যায়াম। অনেকেই গর্ভাবস্থায় সম্পূর্ণ নড়াচড়া বন্ধ করে দেয় এবং একেবারেই শারিরিক পরিশ্রম করেনা। এর ফলে তাদের গর্ভাবস্থায় অনেক অসুবিধা দেখা দেয় যা হালকা ব্যায়াম অনেকাংশে লাঘব করতে পারে। চলুন জেনে নেই গর্ভাবস্থায় কি ধরণের ব্যায়াম করা যায় এবং তা একজন হবু মায়ের কি ধরণের সহায়তা করে।

গর্ভাবস্থায় হালকা যেসব ব্যায়াম করা যেতে পারে-

১. সম্পূর্ণ গর্ভকালীন সময়েই হাঁটাহাঁটি করা যায়। হাঁটা এসময়ে সবচেয়ে নিরাপদ ব্যায়াম। প্রতিদিন নিয়ম করে সকাল বিকাল অন্তত আধা ঘণ্টা হাঁটা উচিত।
২. গর্ভাবস্থায় সাঁতার খুবই নিরাপদ ও ভালো ব্যায়াম।
৩. গর্ভাবস্থার জন্য বিশেষভাবে উপযোগী কিছু যোগব্যায়াম রয়েছে।
৪. ফ্রি হ্যান্ড কিছু ব্যায়াম প্রতিদিন আধা ঘন্টা করে করা যেতে পারে।
৫. এছাড়া নিত্যদিনের সব কাজ করে যাবেন।

এই হালকা ব্যায়ামগুলো করলে আপনি গর্ভাবস্থায় যেসব সুবিধা পাবেন সেগুলো হলো,

(১)গর্ভাবস্থায় দৈনন্দিন ব্যায়ামে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং হার্ট ও পেশীকে শক্তিশালী করে। নিয়মিত ব্যায়ামে পিঠের ব্যথা কমে যায়। নিয়মিত ব্যয়াম করলে গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভাবস্থার যন্ত্রনার সঙ্গে ভালভাবে নিজেকে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে।

(২) গর্ভাবস্থায় একজন মহিলার শারীরিক নানা সমস্যা দেখা দেয়। যেমন, পিঠে ব্যথা, পা ফোলা, পায়ে পানি আসা, গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি। প্রতিনিয়ত ব্যায়াম এবং সাঁতার কাটলে ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা অনেকাংশে হ্রাস পায়। উচ্চ রক্তচাপ কমাতে বেশ সহায়তা করে ব্যায়াম। এছাড়া ব্যায়ামের কারনে মাংশপেশী শক্ত হয় এবং শারীরিক কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাক পেইন ওও পেলভিক পেইন কমাতেও সাহায্য করে।

(৩) অনেক গর্ভবতী মহিলা, বিশেষ করে প্রথম সন্তান গর্ভে ধারণকারী মহিলারা মর্নিং সিকনেসের সমস্যায় ভুগেন। এই সমস্যার কারনে গর্ভবতী মহিলাদের ঘন ঘন বমি হয়। শরীর অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়ে। খাবারে রুচি কমে আসে। খেতে পারেন না। প্রতিদিন ৩০ মিনিট ব্যায়াম করলে এই সমস্যা অনেক কমে যায়।

(৪) অনেক গর্ভবতী মহিলাই এই সময়ে গর্ভকালীন বিষন্নতায় ভোগে। ফলে মানসিক ও শারীরিকভাবে তারা নানা রকম শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হন। গর্ভাবস্থায় নিয়মিত ব্যায়াম করলে মানসিক বিষন্নতা, উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। হতাশা ভাব কেটে গিয়ে মনে প্রশান্তি আসে। কাজে উদ্যোম আনে, শরীরের কর্মচঞ্চলতা ফিরে আসে। নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ ফিরে আসে।

(৫) এসময়ে অনেকের অনিদ্রা দেখা দেয়। প্রতিদিন ব্যায়াম করলে অনিদ্রা ভাব কেটে যায়। পরিপূর্ণ ও গভীর ঘুমে সহায়তা করে।

(৬) গর্ভাবস্থায় অনেক গর্ভবতী মহিলারই কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দেখা দেয়। একজন গর্ভবতী মহিলা দৈনিক যদি ৩০ মিনিট হাঁটতে পারেন, তাহলে এই সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

(৭) গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করলে তা ঊরু, পিঠ ও শরীরের নিম্নাংশের মাসল টোন করে। প্রসবের সময় লেবার পেইন কমায়। আপনার শরীরকে প্রসবের জন্য প্রস্তুত করে। স্বাভাবিক প্রসবে সাহায্য করে।

(৮) গর্ভাবস্থায় নারীর চেহারায় অনেক পরিবর্তন আসে। এই পরিবর্তনগুলো অনেকেই মেনে নিতে পারেন না। নিজেকেই অচেনা মনে হতে থাকে। মন-মেজাজ ভালো থাকে না। ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কে এন্ডরফিন নামক হরমোন নিঃসৃত হয় যা মন ভালো রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও ব্যায়াম এনার্জি লেভেল বাড়ায়। চেহারায় নতুন প্রাণ চাঞ্চল্যতা ফিরে আসে। নিজের চেহারায় এক অন্যরকম গাম্ভীর্য চলে আসে যাতে একজন গর্ভবতী নারী তার ব্যক্তিত্বকে নতুন রূপে আবিষ্কার করে।

(৯) গর্ভাবস্থায় স্বভাবিকভাবেই নারীর শরীরের ওজন বৃদ্ধি পায়। ফলে কাজকর্মে ধীরতা চলে আসে। গর্ভাবস্থায় যেসব মহিলারা প্রতিদিন হালকা কয়েকটি ব্যায়াম করেন তাদের শারীরিক ওজন স্বাভাবিক অন্য একজন গর্ভবতীর শরীরের ওজনের চেয়ে বেশ কিছুটা কম থাকে। তাছাড়া গর্ভাবস্থায় নিয়মিত ব্যায়াম করলে বাচ্চা হওয়ার পর ব্যায়ামের রুটিনে ফিরে আসা খুব সহজ হয়। ফলে খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে যাওয়া ওজন কমে আসে।

(১০) গর্ভবতী মায়ের নিয়মিত ব্যায়ামে তার গর্ভস্থ শিশুর রক্ত স্বাভাবিক থাকে। হার্টের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এমনকি এক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যায়ামের কারণে সন্তানের মস্তিস্ক অনেক উন্নত হয় এবং স্মৃতি শক্তিতে প্রখর হয়।

সর্বশেষ সংবাদ

মেডিকেল এর আরও সংবাদ