জলে চোখ ভেসে যায়


ই-বার্তা প্রকাশিত: ২৪শে আগস্ট ২০১৭, বৃহঃস্পতিবার  | রাত ০২:০২ সিনেমা

ই-বার্তা।। মঙ্গলবার সকাল থেকেই বিএফডিসির ভেতরে ও বাইরে ছিল অগণিত মানুষের ভিড়। চারদিকে ছিল কান্নার রোল। বাঁধভাঙা চোখের জলে ভেসেছিলেন নায়করাজ রাজ্জাকের দীর্ঘদিনের সহকর্মী, স্বজন ও ভক্তরা। অশ্রুসজল চোখে তারা এসেছিলেন প্রিয়জন ও প্রিয় শিল্পীকে শেষ বিদায় জানাতে। বেলা ১১টায় যখন ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে নায়করাজের মরদেহ আনা হয়, তখন পুরো বিএফডিসি ছিল কান্নায় মুখর। জানাজা শেষে দুপুর ১২টায় মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। একই চিত্র চোখে পড়ে সেখানেও। কিংবদন্তি অভিনেতাকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে অনেকেই ছুটে গিয়েছিলেন সেখানে। ভারাক্রান্ত হৃদয়ে কীর্তিমান অভিনেতাকে নিয়ে করেছেন স্মৃতিচারণ। বলেছেন তার বর্ণাঢ্য অভিনয় জীবন ও ব্যক্তিসম্পর্ক নিয়ে নানা কথা।
চলচ্চিত্রের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন
রাজ্জাক বাংলা চলচ্চিত্রের ভিত্তি স্থাপন করে গেছেন। এ ভিত্তির ওপর ভর করে বাংলা চলচ্চিত্র আজকের এ অবস্থানে। অদূর ভবিষ্যতেও তিনি চলচ্চিত্রের পথপ্রদর্শক হয়ে থাকবেন। এ জাতির কাছে তিনি ইতিহাস হয়ে থাকবেন।

নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা রেখেছিলেন

_নাসির উদ্দীন ইউসুফ

ষাটের দশকে যখন দেশে পাকিস্তানিদের ব্যাপক প্রভাব, তখন রাজ্জাককে কেন্দ্র করেই বাংলা চলচ্চিত্রের উত্থান হয়। তার মধ্য দিয়ে বাঙালির জাতিসত্তার বিকাশ ঘটেছিল। বাঙালি জাতির আত্ম-অনুসন্ধানের যে প্রক্রিয়া, সেখানে চলচ্চিত্র একটা বড় ভূমিকা রেখেছিল। আর চলচ্চিত্রকে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা রেখে গেছেন তিনি। আগামী দিনের তরুণ প্রজন্ম চলচ্চিত্রে তার অবদান নিয়ে গবেষণা করবে, সে অনুযায়ী এগিয়ে নিয়ে যাবে বাংলা চলচ্চিত্রকে।

নায়করাজ উপাধির যোগ্য ছিলেন

_সুচন্দা

এমন একটি সংবাদ শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। এর আগেও তাকে নিয়ে বহুবার গুঞ্জন উঠেছিল। এবারের সংবাদটিকে তেমন গুঞ্জনই মনে করেছিলাম। তবে এটি সত্যি হবে, তা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। তার সঙ্গে আমি বহু চলচ্চিত্রে কাজ করেছি। সেই বেহুলা থেকে শুরু করে কতশত ছবি। জহির রায়হান নিজেও তাকে প্রচণ্ড ভালোবাসতেন। রাজ্জাক ও আমাদের মধ্যে অদ্ভুত সুন্দর একটা সম্পর্ক তৈরি হয়। আমাদের পরিবারের সঙ্গে রাজ্জাকের পরিবারের দারুণ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। যে কোনো ঘরোয়া আয়োজনে তাকে নিমন্ত্রণ জানাতাম। রাজ্জাক আনন্দের সঙ্গেই সে নিমন্ত্রণ গ্রহণ করতেন। এরপর সবার উপস্থিতিতে শুরু হতো জমজমাট আড্ডা। তার এ চলে যাওয়ায় যে শূন্যতা তৈরি হলো, তা কখনও পূরণ হবে না। তার যে অবস্থান ও জনপ্রিয়তা তৈরি হয়েছে, তা মানুষ যুগ যুগ ধরে টিকিয়ে রাখবে বলেই আমার বিশ্বাস। নায়করাজ উপাধির যোগ্য লোকই ছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন অভিভাবক এবং চলচ্চিত্রের একটি প্রতিষ্ঠান।

আপাদমস্তক চলচ্চিত্রের মানুষ ছিলেন

_শাবানা

নায়করাজ বলতে একজনকে বোঝানো হয়। তিনি আর কেউ নন, বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়ক আবদুর রাজ্জাক। তার সঙ্গে আমার সর্বশেষ কথা হয় এবারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অনুষ্ঠানে। তাও খুব বেশিক্ষণের জন্য নয়। তখন তাকে কথা দিয়েছিলাম; ডিসেম্বরে যখন দেশে আসব, তখন তার বাসায় গিয়ে আড্ডা দেব। তা আর হলো না। রাজ্জাক শুধু একজন গুণী অভিনেতা ছিলেন না, তিনি আপাদমস্তক চলচ্চিত্রের মানুষ ছিলেন। জীবনের শেষ বয়স পর্যন্ত এ মানুষটি চলচ্চিত্রের নানা বিষয় নিয়ে ভাবতেন। সময়-সুযোগ পেলেই ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে যেতেন। আমরা একজন পরিশ্রমী, সৎ ও চলচ্চিত্রপ্রেমিককে হারালাম, যার অভাব কখনও পূরণ হওয়ার নয়।

তার আর আসা হলো না

_ববিতা

রাজ্জাক ভাইয়ের চলে যাওয়ার সংবাদটি এখনও আমার মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। এখনও মনে হচ্ছে, তিনি আমাদের মাঝেই আছেন। অল্প কিছুদিন আগে তার সঙ্গে আমার ফোনে কথা হয়। তখন তিনি সপরিবারে থ্যাইল্যান্ড যাবেন। ফোনে তাকে আমি বাসায় আসার জন্য দাওয়াত করি। তাকে বলেছিলাম, নিজ হাতে রান্না করে তাদের খাওয়াব। আমার কথা শুনে তিনি অনেক খুশি হয়েছিলেন। বলেছিলেন, থ্যাইল্যান্ড থেকে ফিরে তিনি ও ভাবি বাসায় আসবেন। তার আর আসা হলো না। এর আগেই তিনি আমাদের ছেড়ে চিরবিদায় নিলেন। রাজ্জাক ভাই ও জহির ভাইয়ের হাত ধরে আমি চলচ্চিত্রে এসেছি। আমরা একসঙ্গে অনেক ছবিতে কাজ করেছি। রাজ্জাক ভাইয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা ছিল এক পরিবারের মতো। আমার যে কোনো বিষয়ে রাজ্জাক ভাইয়ের পরামর্শ নিতাম। তার সঙ্গে আলোচনা করে জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

বড় মনের মানুষ ছিলেন

_অঞ্জনা

ওনার কারণেই আমি আজকের অঞ্জনা। ওনার সঙ্গে আমার বহু স্মৃতি। আমার ৩৫টির বেশি সিনেমা ওনার সঙ্গে। তিনি এমন একজন বড় মাপের মানুষ ছিলেন, কোনো জুনিয়র শিল্পীও তার বাড়িতে এলে তাকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিতেন। এমন মনের মানুষ আর পাব না। তার মতো মহানায়ককে দেশ-জাতি কোনোদিন ভুলবে না। তার শূন্যতা কখনও পূরণ হওয়ার নয়।

মাথার মণি হয়ে থাকবেন

_আহমেদ শরীফ

রাজ্জাক ভাই আজ আমাদের মাঝে নেই এটা ভাবতেই পারছি না। তিনি এভাবে আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন এটা কল্পনাও করতে পারিনি। আমি জানি, সবাইকে একদিন চলে যেতে হবে। তারপরও তার মৃত্যু বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। তিনি ঘরে বসে দুটো কথা বললেও সেটা আমাদের মাথার মণি হয়ে থাকত। চলচ্চিত্রের দুঃসময়ে তার কথা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেই ১৯৭১ সালে আমার অভিনয় জীবনে তাকে পাশে পেয়েছিলাম। সে সময় তিনি দাপুটে নায়ক ছিলেন। তিনি আমাকে এতটা ভালোবাসতেন, তা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। তিনি যখন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন, তখন আমি সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। তিনি আমাকে সবসময় ভালো থাকার পরামর্শ দিতেন। তিনি চলে গেলেও আমার মাথার মণি হয়ে থাকবেন।

কত দিন পর তোকে দেখলাম

_শাবনূর

রাজ্জাক আঙ্কেলকে নিয়ে এর আগে কয়েকবার মৃত্যুর গুজব উঠেছিল। এবারও মনে করেছিলাম, সে রকম কিছুই। প্রথমে আমি কথাটি বিশ্বাস করতে চাইনি। কারণ যতদূর জানি, তিনি ভালো আছেন, সুস্থ আছেন। কিন্তু নানা স্থান থেকে যখন খবর আসতে শুরু করল, তখন মনের মধ্যে হারানোর ভয়টা বেড়ে গেল। অবশেষে যখন ভয়টা সত্যি হলো, তখন নিজেকে আর সামলাতে পারিনি। চোখ দিয়ে অবিরত পানি ঝরেই চলছে। কোনো কথা বলতে পারছিলাম না। চলচ্চিত্রে আমি অনিয়মিত হওয়ায় অনেকেই মন খারাপ করছিলেন। তাদের মধ্যে রাজ্জাক আঙ্কেল ছিলেন অন্যতম। আমার সঙ্গে তার সর্বশেষ দেখা হয়েছিল তার জন্মদিনে। আমরা সবাই মিলে তার বাসায় গিয়েছিলাম। সেদিন অনেক দুষ্টুমি করেছিলাম। আমাকে দেখেই হাত বাড়িয়ে রাজ্জাক আঙ্কেল বলেছিলেন, আয় মা, কাছে এসে বোস। কতদিন পর তোকে দেখলাম। চোখের সামনে আজও সে স্মৃতি ভেসে উঠছে।

বাবার মতো ছিলেন

_প্রসেনজিৎ

নায়ক রাজ্জাক আমার কাছে বাবার মতো ছিলেন এবং থাকবেন। তার সঙ্গে অসংখ্য ছবিতে কাজ করেছি। তার এই অকাল মৃত্যুতে শুধু বাংলা চলচ্চিত্র নয়, আমার হৃদয়েও সৃষ্টি হয়েছে বিশাল শূন্যতা। তার মৃত্যুতে গভীর শোক জানাই। শান্তিতে থাকুক রাজ্জাক সাহেব।

শান্তিতে থাকুক স্যার

_ঋতুপর্ণা

রাজ্জাক স্যারের মৃত্যুর খবর শুনে প্রচণ্ড বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলাম। অনেক কিছুই লিখতে ইচ্ছা করছে এই প্রিয় নায়ককে নিয়ে। আমরা একসঙ্গে বাবা কেন চাকরসহ আরও ছবিতে কাজ করেছিলাম। শান্তিতে থাকুক স্যার।

সর্বশেষ সংবাদ

সিনেমা এর আরও সংবাদ